সবার আগে কারা জান্নাতে যাবেন, আর কারা জাহান্নামে?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :জান্নাত ও জাহান্নাম—পরকালীন জীবনের দুই চূড়ান্ত গন্তব্য। একজন মানুষের ঈমান, নিয়ত ও আমলের ভিত্তিতেই স্থির হবে, সে জান্নাতি না জাহান্নামি। তবে কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আগে কারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, আর কারাই বা প্রথমে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে—তা নিয়ে একাধিক সহিহ হাদিস রয়েছে।

 

নবীজি জান্নাতে প্রবেশ করবেন সবার আগে

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.) জান্নাতের প্রথম অতিথি হবেন। তিনি বলেন, ‘আমি জান্নাতের দরজায় এসে কড়া নাড়ব। তখন জান্নাতের দারোয়ান বলবে, কে আপনি? আমি বলব, মুহাম্মদ। তখন সে বলবে, আপনার ব্যাপারে নির্দেশ রয়েছে, যেন আপনার আগে কারো জন্য জান্নাতের দরজা না খুলি।’ (মুসলিম: ১৯৭)

 

উম্মতে মুহাম্মদিই সবার আগে জান্নাতে যাবে

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দুনিয়াতে সর্বশেষে এলেও আমরাই অগ্রণী হবো। মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম আমরাই জান্নাতে প্রবেশ করব।’ (বুখারি: ৮৯৬; মুসলিম: ৮৫৫)

 

আবু বকর (রা.)-এর সৌভাগ্য

সাহাবাদের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করবেন হজরত আবু বকর (রা.)। হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘হে আবু বকর, জেনে রাখো, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ: ৪৬৫২)

 

দরিদ্র মুহাজিরদের জান্নাত-অগ্রাধিকার

দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হলেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা নিজের ঘরবাড়ি ছেড়েছেন, সীমান্ত রক্ষা করেছেন, শহিদ হয়েছেন—সেই দরিদ্র মুহাজিররাই জান্নাতে যাবেন সবার আগে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর বান্দা এই মুহাজিরদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। ফেরেশতারা তাদের কাছে গিয়ে বলবে, ধৈর্য ধারণের ফলস্বরূপ তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৫৭০)

 

আর জাহান্নামে কারা যাবে সবার আগে?

আল্লাহর কাছে নামকাওয়াস্তে ইবাদত করে দুনিয়ায় খ্যাতি কুড়ানো তিন শ্রেণির লোকই জাহান্নামের প্রথম যাত্রী হবে।

 

১. শহিদ দাবি করা লোক
যে ব্যক্তি বলে—‘আমি শহিদ হয়েছি’, অথচ তার নিয়ত ছিল লোক দেখানো।

 

২. লোক দেখানো দানবীর
যে আল্লাহর নামে দান করেছে, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল ‘লোকের মুখে নাম থাকুক।’

 

৩. সম্মান কুড়ানো আলেম
যে জ্ঞান দিয়েছে, কোরআন পড়িয়েছে, হাদিস শিখিয়েছে—তবে তা করেছে শুধু ‘মানুষ যেন তাকে বড় আলেম মনে করে’ এই উদ্দেশ্যে।

 

আল্লাহ প্রত্যেককে বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছ! তুমি দুনিয়াতেই প্রশংসা পেয়ে গেছ, এখানে তোমার কিছুই নেই।’ অতঃপর তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তিরমিজি: ২৩৮২)

 

জান্নাত-জাহান্নামের বিষয়টি শুধু বাহ্যিক কর্মে সীমাবদ্ধ নয়; নিয়ত, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টিই সেখানে মূল নিয়ামক। আমরা যেন সেই সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হই, যারা রাসুল (স.)-এর নেতৃত্বে জান্নাতে প্রবেশ করবেন এবং আল্লাহ যেন আমাদের রক্ষা করেন রিয়া, অহংকার ও লোক দেখানো ইবাদত থেকে।

 

আল্লাহ আমাদের জান্নাতের প্রথম সারিতে স্থান দিন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আন্দোলন কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না : রিজভী

» হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেন নুরুল হক নুর

» দোহায় তৌহিদ হোসেন-ইসহাক দার বৈঠক

» বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত ঢাকা

» যমুনা অভিমুখে প্রাথমিক শিক্ষকরা, পুলিশের জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

» জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হবে: আসিফ মাহমুদ

» নবীর আদর্শ মনে প্রাণে ধারণ করে জীবন গঠন হবে ….. জেলা প্রশাসক নরসিংদী 

» ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের উত্তরা ক্যাম্পাসে ইয়াং লার্নার ইংলিশ লার্নিং সেন্টার-এর নতুন শাখা চালু করল ব্রিটিশ কাউন্সিল

» ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’-এর অধীনে ব্র্যাক ব্যাংকের দেশব্যাপী আর্থিক সাক্ষরতা প্রোগ্রাম আয়োজন

» নওগাঁয় ডিবি পুলিশের অভিযানে মাদক কারবারি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ আটক ৩

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সবার আগে কারা জান্নাতে যাবেন, আর কারা জাহান্নামে?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :জান্নাত ও জাহান্নাম—পরকালীন জীবনের দুই চূড়ান্ত গন্তব্য। একজন মানুষের ঈমান, নিয়ত ও আমলের ভিত্তিতেই স্থির হবে, সে জান্নাতি না জাহান্নামি। তবে কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আগে কারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, আর কারাই বা প্রথমে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে—তা নিয়ে একাধিক সহিহ হাদিস রয়েছে।

 

নবীজি জান্নাতে প্রবেশ করবেন সবার আগে

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.) জান্নাতের প্রথম অতিথি হবেন। তিনি বলেন, ‘আমি জান্নাতের দরজায় এসে কড়া নাড়ব। তখন জান্নাতের দারোয়ান বলবে, কে আপনি? আমি বলব, মুহাম্মদ। তখন সে বলবে, আপনার ব্যাপারে নির্দেশ রয়েছে, যেন আপনার আগে কারো জন্য জান্নাতের দরজা না খুলি।’ (মুসলিম: ১৯৭)

 

উম্মতে মুহাম্মদিই সবার আগে জান্নাতে যাবে

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দুনিয়াতে সর্বশেষে এলেও আমরাই অগ্রণী হবো। মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম আমরাই জান্নাতে প্রবেশ করব।’ (বুখারি: ৮৯৬; মুসলিম: ৮৫৫)

 

আবু বকর (রা.)-এর সৌভাগ্য

সাহাবাদের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করবেন হজরত আবু বকর (রা.)। হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘হে আবু বকর, জেনে রাখো, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ: ৪৬৫২)

 

দরিদ্র মুহাজিরদের জান্নাত-অগ্রাধিকার

দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হলেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা নিজের ঘরবাড়ি ছেড়েছেন, সীমান্ত রক্ষা করেছেন, শহিদ হয়েছেন—সেই দরিদ্র মুহাজিররাই জান্নাতে যাবেন সবার আগে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর বান্দা এই মুহাজিরদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। ফেরেশতারা তাদের কাছে গিয়ে বলবে, ধৈর্য ধারণের ফলস্বরূপ তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৫৭০)

 

আর জাহান্নামে কারা যাবে সবার আগে?

আল্লাহর কাছে নামকাওয়াস্তে ইবাদত করে দুনিয়ায় খ্যাতি কুড়ানো তিন শ্রেণির লোকই জাহান্নামের প্রথম যাত্রী হবে।

 

১. শহিদ দাবি করা লোক
যে ব্যক্তি বলে—‘আমি শহিদ হয়েছি’, অথচ তার নিয়ত ছিল লোক দেখানো।

 

২. লোক দেখানো দানবীর
যে আল্লাহর নামে দান করেছে, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল ‘লোকের মুখে নাম থাকুক।’

 

৩. সম্মান কুড়ানো আলেম
যে জ্ঞান দিয়েছে, কোরআন পড়িয়েছে, হাদিস শিখিয়েছে—তবে তা করেছে শুধু ‘মানুষ যেন তাকে বড় আলেম মনে করে’ এই উদ্দেশ্যে।

 

আল্লাহ প্রত্যেককে বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছ! তুমি দুনিয়াতেই প্রশংসা পেয়ে গেছ, এখানে তোমার কিছুই নেই।’ অতঃপর তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তিরমিজি: ২৩৮২)

 

জান্নাত-জাহান্নামের বিষয়টি শুধু বাহ্যিক কর্মে সীমাবদ্ধ নয়; নিয়ত, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টিই সেখানে মূল নিয়ামক। আমরা যেন সেই সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হই, যারা রাসুল (স.)-এর নেতৃত্বে জান্নাতে প্রবেশ করবেন এবং আল্লাহ যেন আমাদের রক্ষা করেন রিয়া, অহংকার ও লোক দেখানো ইবাদত থেকে।

 

আল্লাহ আমাদের জান্নাতের প্রথম সারিতে স্থান দিন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com